২৮ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞ গণতন্ত্রের কালো অধ্যায় : জেএসএফ বাংলাদেশ
- Update Time : ০২:৫২:৪৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ অক্টোবর ২০২৫
- / ২৫ Time View

২৮ অক্টোবরের হত্যাযজ্ঞ গণতন্ত্রের কালো অধ্যায় : জেএসএফ বাংলাদেশ
হাকিকুল ইসলাম খোকন, বাপসনিউজঃ জাতীয় সম্মিলিত ফোরাম ব জেএসএফ বাংলাদেশের সংগঠক হাজী আনোয়ার হোসেন লিটন এক বিবৃতিতে বলেছে , বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এর দিনটি এক কালো অধ্যায় হিসেবে অম্লান। সেদিন রাজধানীর পল্টনে প্রকাশ্য রাস্তায় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ শুধু কয়েকজন মানুষের জীবন কেড়ে নেয়নি; এটি দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে।খবর আইবিএননিউজ ।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে ২৮ অক্টোবর ২০০৬-এর দিনটি এক কালো অধ্যায় হিসেবে অম্লান। সেদিন রাজধানীর পল্টনে প্রকাশ্য রাস্তায় সংঘটিত হত্যাযজ্ঞ শুধু কয়েকজন মানুষের জীবন কেড়ে নেয়নি; এটি দেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, রাজনৈতিক সহনশীলতা এবং রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এ ঘটনা নিছক কোন সহিংসতা ছিল না- এটি পরিকল্পিত, সুশৃঙ্খলভাবে সংগঠিত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, যা গণতন্ত্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের অংশ।
ঘটনার প্রকৃতি থেকে স্পষ্ট, শুধুমাত্র সহিংসতা ঘটানোই উদ্দেশ্য ছিল না। রাস্তায় প্রকাশ্যে মানুষ হত্যা এবং লাশের ওপর নৃত্য চালানোর মতো অমানবিক আচরণ করার জন্য তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ দলটির শীর্ষ নেতৃত্ব সরাসরি নির্দেশনা দিয়েছিল। এ ধরনের নির্দেশনার ফলস্বরূপ পুরো শহর রক্তে ভেসে ওঠে। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, ক্ষমতার লোভ ও রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিশ্চিহ্ন করার জন্য পাশবিক হয়ে যেতেও দ্বিধা ছিল না আওয়ামী লীগের। সেদিনের ঘটনার প্রেক্ষাপটও উদ্বেগজনক। সংবিধান অনুযায়ী, চারদলীয় জোট সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসন গঠন করার কথা ছিল, যা জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করত। কিন্তু আওয়ামী লীগের নজিরবিহীন সহিংসতা এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির কারণে সেদিনের প্রশাসন সংবিধান রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতা পরবর্তীতে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে রাস্তায় রূপ দেয় এবং বহু নিরীহ মানুষের জীবনহানি ঘটায়।
শুধু তাই নয়; এ ঘটনার জেরে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হয়, অবৈধ একটি সরকার দায়িত্ব পালন করে এবং দেশে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বিরাজনীতিকরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। দীর্ঘ সময় পেরিয়েও, সে হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত দায়ী ও নির্দেশদাতাদের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার কার্যকরভাবে সম্পন্ন হয়নি। বিচারপ্রক্রিয়ার বিলম্ব কেবল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে কষ্ট দেয়নি, বরং সমাজে সহিংসতার সংস্কৃতি স্থায়ী করেছে। এটি প্রমাণ করে যে, ন্যায়বিচার বিলম্ব গণতন্ত্রের ভিত্তিকে ক্ষয় করে।
ঘটনার পরদিন পল্টন থানায় জামায়াতের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করা হয় এবং এ মামলায় আওয়ামী লীগসহ ১৪ দলের অন্তত ৪০ জন নেতাকে আসামী করা হয়। ২০০৭ সালের ১১ এপ্রিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে পলাতক আসামী হিসেবে উল্লেখ করে ৪৬ জন আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়। চার্জশীট দাখিলের পর ২২ এপ্রিল ২০০৭ মামলার চার্জশীট গ্রহণ করেন মহানগর হাকিম মীর আলী রেজা। চার্জশীট গ্রহণ করেই আদালত পলাতক আসামী শেখ হাসিনাসহ অন্যদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। পরদিন ২৩ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তার নাটকীয় আবেদনের প্রেক্ষিতে পরোয়ানা স্থগিত করে মামলাটি অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন মহানগর হাকিম মীর আলী রেজা। সে থেকে অধিকতর তদন্তের নামে তিন বছর পার করে দেয়া হয়।
এরপর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তাদের দলীয় নেতাকর্মী, সমর্থক ও শুভাকাক্ষীদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন স্থানে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে সে বছরের ৯ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব আবু সাঈদ জনস্বার্থে পল্টন থানায় দায়ের করা হত্যা মামলাটি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে ঢাকা জেলা প্রশাসককে একটি পত্র দেয়। ১৭ আগস্ট আদালত মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন মঞ্জুর করে। আইন অনুযায়ী যেকোন হত্যা মামলা বাদীর সম্মতি ছাড়া প্রত্যাহার করার সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার তাই করেছিল।
আত্মত্যাগকারী শহীদরা আমাদের দেখিয়েছেন যে নির্যাতন, অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোই গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি। তাদের আত্মত্যাগের মূল্যায়ন না করলে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক সহিংসতা, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং বিচারবিচ্ছিন্নতার সংস্কৃতি চালু থাকবে। ভিকটিম পরিবারগুলো এখনও অপেক্ষা করছে ন্যায়বিচারের। তারা আশা করছে, জুলাই অভ্যুত্থানের হত্যাকাণ্ডের মতোই, ২৮ অক্টোবরের হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত দায়ীদের বিশেষ করে শেখ হাসিনার যিনি তার নেতাকর্মীদের সহিংসতার নির্দেশনা দিয়েছেন, তাদের সবাইকে বিচারের মুখোমুখি আনা হবে।
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটও আমাদের সতর্ক করে। বিশ্বের অন্যান্য গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক সহিংসতা ও হত্যার ঘটনায় নেতৃত্বদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশেও একই ন্যায়বিচার নিশ্চিত না হলে দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও জনগণের বিশ্বাস নষ্ট হতে পারে। শহীদদের আত্মত্যাগ আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, ক্ষমতা লাভের জন্য সহিংসতার পথ কখনোই কাম্য হতে পারে না। আমাদের উচিত অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে সমাজে সহনশীলতা, ন্যায়বিচার এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করা।
















